পৃথিবী খুব দ্রুত অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দূষণ, ধোঁয়া, কার্বন ডাই অক্সাইড – এ সবকিছুই বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী। পেট্রোল বা ডিজেল চালিত গাড়ি এ উষ্ণায়নে কোনো অংশে কম অবদান রাখছে না। আমরা অনেক আগে থেকেই বিকল্পের কথা শুনে আসছি। বড় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো তাই বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড গাড়ি নির্মাণের পেছনে প্রচুর অর্থ ও শ্রম ব্যবহার করছে, যার ফলে উন্নত দেশগুলোতে ইতিমধ্যেই গ্যাসচালিত গাড়ির সংখ্যা কমেছে লক্ষ্যণীয়ভাবে।
কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অনেকেই হাইব্রিড বা বৈদ্যুতিক গাড়ি সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন না। তবে এসব গাড়ির উপকারিতা জানলে অবাক হবেন। আমাদের দেশে পরিপূর্ণ বৈদ্যুতিক গাড়ি এখনো পুরোপুরি সহজলভ্য নয়। তবে অনেক হাইব্রিড গাড়ি বৈদ্যুতিক গাড়ির থেকেও বেশি উপকারী ও লাভজনক। চলুন তাহলে আজ জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু হাইব্রিড গাড়ি সম্পর্কে।
টয়োটা আরএভি৪ প্রাইম
টয়োটা গাড়ি ছাড়া হাইব্রিড গাড়ির তালিকা সবসময়ই অসম্পূর্ণ। টয়োটা হলো পাওয়ারট্রেন প্রযুক্তির পথপ্রদর্শক। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, টয়োটার বৈদ্যুতিক গাড়ি এবং প্লাগ-ইন হাইব্রিডগুলো সময়ের সাপেক্ষে ছিলো অনেকটাই ধীর গতির। কিন্তু অবশেষে, তারা ধীর গতির হাইব্রিড গাড়ির তকমা থেকে বের হয়ে এসেছে, এবং আরএভি৪ প্রাইম তার নিখুঁত প্রমাণ।
এই প্রথম টয়োটা তাদের আইকনিক এসইউভিকে প্লাগ-ইন হাইব্রিড হিসেবে চালু করেছে এবং ফলাফলও অসাধারণ। বর্তমান আরএভি৪ বেশ সুন্দর দেখতে একটি অটোমোবাইল, আর এই শো তে প্রাইম আরো উজ্জ্বলতা যোগ করেছে। এই আরএভি৪ প্রাইম হলো একটি ২.৫ লিটারের ৪ সিলিন্ডারযুক্ত গ্যাস/ইলেকট্রিক প্লাগ-ইন হাইব্রিড। আরএভি৪ প্রাইমের সর্বোচ্চ শক্তি উৎপাদনের ক্ষমতা হলো ৩০২ হর্সপাওয়ার। তাছাড়া এই নতুন সংস্করণটি ০ থেকে ৬০ মাইল/ঘন্টা বেগে পৌছাঁতে সময় নেয় মাত্র ৬ সেকেন্ড।


নতুন এই টয়োটা আরএভি৪ প্রাইম শহরের রাস্তায় ৩৬ মাইল/গ্যালনের ফুয়েল ইকোনমি প্রদান করে। হাইওয়েতে এর ফুয়েল ইকোনমি ৪০ মাইল/গ্যালন। আরএভি৪ প্রাইম একটি প্রশস্ত, সুসজ্জিত, আরামদায়ক, এবং নির্ভরযোগ্য পারিবারিক এসইউভি। সুতরাং, কেন এর এত বেশি চাহিদা নিশ্চয় বুঝতেই পারছেন।
কুপরা ফরমেন্টর
স্প্যানিশ অটোমেকার, সিয়াট, কয়েক বছর আগে তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ডের কুপরা ব্যাজ চালু করে সবাইকে বিভ্রান্তিতে ফেলেছিলো। প্রথমে, তারা কেবলমাত্র বিফড সিয়াট মডেলের ক্যাটালগ বিক্রি করেছিলো। কিন্তু সম্প্রতি, তারা অনেক অনন্য মডেলের গাড়িও দেখানো শুরু করেছে। আর ফর্মেন্টর এই নতুন মডেলগুলোর একটি।


ফর্মেন্টর বানানো হয়েছে এমকিউবি ইভো প্ল্যাটফর্মের উপর ভিত্তি করে, অনেকটা লিওনের মতো। কিন্তু স্পোর্টি ক্রসওভার স্টাইলের জন্য এটি বিশ্বের অন্যতম কয়েকটি গাড়ির মধ্যে একটি। এই প্লাগ-ইন হাইব্রিড সংস্করণটি ২.০ লিটারের ৪ সিলিন্ডারযুক্ত ইঞ্জিনে চলে যা ২৪৫ হর্সপাওয়ার পর্যন্ত শক্তি উৎপন্ন করতে পারে। গাড়িটির সম্মিলিত মাইলেজ ৪৫ মাইল/গ্যালন। এর কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন হার মাত্র ১৪৩ গ্রাম/কিমি।
পোর্শে পানামেরা টার্বো এস এ-হাইব্রিড
বেশ ভারী নাম, তাই না? টার্বো এস ই-হাইব্রিড এই লাইনআপের সবচেয়ে শক্তিশালী মডেল। গাড়িটির হুডের নীচে টুইন-টার্বো ৩৯৯৬ সিসি ভি৮ ইঞ্জিনটি একটি বৈদ্যুতিক মোটরের সাথে যুক্ত। এই সম্মিলিত সিস্টেমটি ৬৯০ হর্সপাওয়ারের সম্মিলিত আউটপুট প্রদান করে।


আপনি জেনে অবাক হবেন যে এটি আসল ল্যাম্বোরগিনি অ্যাভেন্টাডোর থেকে মাত্র এক হর্সপাওয়ার কম। এই পানামেরা টার্বো ৩১৫ কিমি/ঘন্টা গতিতে দৌড়াতে পারে। গাড়িটি যথেষ্ট বিলাসবহুল, আরামদায়ক ও ড্রাইভিং এর জন্য দুর্দান্ত। তাছাড়া হুডের সেই ব্যাজটি আপনার মন কেড়ে নিতে পারে।
স্কোডা সুপার্ব আইভি
স্কোডা সুপার্ব-এর বর্তমান প্রজন্ম খুব বেশিদিনের পুরানো নয়। এটি ২০২০ মডেল বছরের জন্য ফেসলিফ্ট পেয়েছে। ভিজ্যুয়াল পরিবর্তন ছাড়াও, সুপার্বে একটি বড় পরিবর্তন আনা হয়েছিলো, তা হলো গাড়িটিতে নতুন প্লাগ-ইন হাইব্রিড পাওয়ারট্রেন চালু।


সুপার্ব আইভি তার প্লাগ-ইন হাইব্রিড পাওয়ারট্রেন ভিডব্লিউ প্যাসাড় জিটিই থেকে নিয়েছে। গাড়িটিতে একটি ১.৪ লিটার টার্বো চার সিলিন্ডারবিশিষ্ট একটি বৈদ্যুতিক মোটরের সাথে যুক্ত। এই সম্মিলিত সিস্টেমটি ২১৮ হর্সপাওয়ারের সম্মিলিত আউটপুট প্রদান করে। সেইসাথে, গাড়িটির সর্বোচ্চ হতি ২২৪ কিমি/ঘন্টা।
পিউগট ৫০৮ পিএসই এসডব্লিউ
আপনি হয়তো কখনোই এই গাড়িটির বিজ্ঞাপন বা প্রচারণা খুব একটা দেখে থাকবেন না। গাড়িটি কখনোই নিজের দিকে ফোকাস টানে না। তবে এটি ৯এক্স৮ হাইপারকারের সাথে খুব জলদি লিম্যানস-এ ফিরে আসছে। যার ফলে তারা আরেকটু চেষ্টা করে পারফরম্যান্স কার গেমে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও আমরা পিউগট-কে তাদের চমৎকার হট হ্যাচব্যাকের জন্য চিনি, তবে তাদের সর্বশেষ ভিন্ন প্রচেষ্টা বাজারে একটি দ্রুতগতির হাইব্রিড সেডান হাইব্রিড নিয়ে এসেছে।


৫০৮ পিএসই (পিউগট স্পোর্ট ইঞ্জিনিয়ার্ড) হলো একটি প্লাগ-ইন হাইব্রিড পারফরম্যান্স সেডান। গাড়িটি ৩৬০ হর্সপাওয়ারের সম্মিলিত সিস্টেম আউটপুট সরবরাহ করতে পারে। ১.৬ লিটারের টার্বো এবং একটি বৈদ্যুতিক মোটর চারটি চাকাই কন্ট্রোল করতে পারে এবং ০ থেকে ১০০ কিলোমিটার/ঘন্টা গতিতে যেতে সময় নেয় মাত্র ৫.৬ সেকেন্ড। গাড়ির এক্সটেরিয়র নিয়ে যদি কথা বলেন, তবে এই গাড়িটি অনেক বিলাসবহুল গাড়ির আউটলুককেও ছাপিয়ে যায়।
শেষকথা
পৃথিবী প্রতিনিয়ত ছোট ছোট পদক্ষেপ গ্রহণ করছে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের দাবানল থেকে নিজেকে রক্ষা করে সবুজ গ্রহে পরিণত হওয়ার। আপনি সবুজ গ্রহায়নের অগ্রযাত্রায় অংশগ্রহণ করতে পারেন একটি হাইব্রিড গাড়ি কিনে। আর যদি কোনো ঝামেলা ছাড়াই গাড়ি কিনতে চান তবে bhalogari.com আপনার সেরা সমাধান হতে পারে। পুরানো গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে গাড়ির অবস্থা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই, আমরা প্রায় ২০০ টি চেকপয়েন্ট পরীক্ষা করে গাড়ির সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে থাকি। তাই গাড়ি কিনতে চাইলে bhalogari.com থেকে কিনুন।