সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ির সঠিক পরিচর্যা

সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ির সঠিক পরিচর্যা

গাড়ির আয়ু নির্ভর করে সঠিক পরিচর্যার উপর। বিশেষ করে সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ির ক্ষেত্রে সঠিক পরিচর্যা অত্যন্ত জরুরী। bhalogari.com-এর মতো বিশ্বস্ত প্লাটফর্ম থেকে সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি কিনে থাকলে আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন যে আপনার গাড়িতে কোনো মেজর ইস্যু নেই। তাছাড়া সাধ্যের মধ্যেই পেয়ে যাচ্ছেন প্রয়োজনীয় প্রিয় মডেলের গাড়িটি। কিন্তু যতোই হোক, গাড়ি যতো পুরানো হবে গাড়ির পরিচর্যা ততো বাড়বে। অর্থাৎ, পুরানো বা সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়িকে বেশিদিন ঝামেলামুক্তভাবে ব্যবহার করতে চাইলে সঠিক পরিচর্যার কোনো বিকল্প নেই। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে আপনি আপনার সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়িটির সঠিক পরিচর্যা করবেন। 

গাড়ির কুলিং সিস্টেমের যত্ন নিন

আপনার গাড়ির আয়ু গাড়ির কিছু পার্টসের উপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভর করে। গাড়ির কুলিং সিস্টেম তার মধ্যে অন্যতম প্রধান একটি অংশ। গাড়ির যে অংশে কুলিং সিস্টেম থাকে তা যথেষ্ট চড়াই-উতরাই এর মধ্যে দিয়ে যায়। তাই কিছুদিন পরপর কুলিং সিস্টেম নিরীক্ষা করা আপনার গাড়ির আয়ু বৃদ্ধিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

আমাদের গরম লাগলে যেমন ফ্যান এসি ছেড়ে দেই এবং ঠান্ডা হই, ঠিক তেমনি গাড়ির ইঞ্জিনের-ও গরম থেকে ঠান্ডা হওয়ার দরকার হয়।

ইঞ্জিন চলার জন্য যতটুকু তাপমাত্রা প্রয়োজন তার থেকে বেশি হলেই গাড়ি অটোমেটিক ফ্যান দিয়ে  রেডিয়েটর ঠান্ডা করে নিজে ঠান্ডা হয়। যেকারণে ইঞ্জিন চলার জন্য কুল্যান্ট এর তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রির নিচে হওয়া দরকার। সেটা হতে পারে ৮০-৮৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা।

আর আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না হাইওয়েতে যখন ব্যস্ততার সাথে ছুটছেন তখন আপনার গাড়ি হুটহাট কাজ করা বন্ধ করে দিক। তাই অবশ্যই গাড়ির কুলিং সিস্টেম কিছুদিন পরপর পরীক্ষা করুন।

আর কিভাবে বুঝবেন যে ওয়াটার পাম্প বদলাতে হবে? যদি ওয়াটার পাম্প থেকে এক প্রকার গ্রিন লিকুইড অর্থাৎ এন্টিফ্রিজ লিকেজ হতে থাকে, তাহলে তখনই ওয়াটার পাম্প বদলাতে হবে। আপনি আপনার বাড়ির গ্যারেজে নিজে নিজেই পরীক্ষা করে এটি বুঝতে পারবেন। সারারাত ধরে গাড়ি রেখে দেওয়ার পর, পরদিন যদি ফ্লোরে পানি বা এন্টিফ্রিজ দেখতে পান, তাহলে বুঝে নিতে হবে যে আপনার গাড়ির ওয়াটার পাম্পে লিক রয়েছে এবং এটা বদলাতে হবে। 

তাছাড়া, প্রত্যেকবার কুলারেন্ট পরিবর্তনের সময় ট্রান্সমিশন ফ্লুইড ও পরিবর্তন করুন। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি ২৪,০০০-৩০,০০০ মাইল পরপর কুলারেন্ট পরিবর্তন করা উচিত। গাড়ির ইঞ্জিন অনেক উচ্চ তাপে চলে, তাই গাড়ির কুলারেন্টের সঠিক পরিচর্যা একটি আবশ্যক বিষয়। বিশেষ করে যখন আপনি একটি সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি চালাচ্ছেন।  

নিয়মিত ইঞ্জিনের তেল পরীক্ষা করুন

গাড়ির অবস্থা ঠিকঠাক রাখতে একদম প্রাথমিক যেসব পরিচর্যা জরুরি, তার মধ্যে নিয়মিত গাড়ির তেল পরীক্ষা করা অন্যতম। নিয়মিত তেল পরিবর্তন করা হলে ইঞ্জিনের চলমান অংশগুলোকে তা যথেষ্ট লুব্রিকেটেড রাখে ও ঘর্ষণজনিত ক্ষতি রোধ করে। 

নিয়মিত তেলের স্তর পরীক্ষা করুন এবং এটি টপ আপ রাখুন। কিভাবে তেলের স্তরের সঠিক রিডিং নিবেন কিংবা কিভাবে টপ আপ রাখবেন? 

শুরু করার আগে, কিছু কথা জেনে রাখুন। আপনি আপনার গাড়ির তেল পরীক্ষা করার আগে, নিশ্চিত করতে হবে যে আপনার গাড়িটি সমতল ভূমিতে পার্ক করা আছে, এবং নিশ্চিত করুন যে ইঞ্জিনটি ঠান্ডা এবং বন্ধ আছে। গাড়ি চালানোর কমপক্ষে ১৫ মিনিটের মধ্যে তেল পরীক্ষা না করাই উচিৎ, যতো বেশি সময় দেওয়া যায় ততো ভাল। এছাড়াও, মনে রাখবেন যে সব গাড়ির ইঞ্জিন কিন্তু একরকম নয়, তাই আপনি যদি সরাসরি তেলের পরিমাণ দেখতে না পান তবে মালিকের ম্যানুয়াল দেখে নিন। 

এবার তেল কিভাবে পরীক্ষা করবেন? বেশিরভাগ ইঞ্জিনে একটি ডিপস্টিক থাকে যার ডগায় থাকে লেভেল ইনডিকেটর। ওই ডিপস্টিকটি টেনে বের করে তা একটি কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করুন। তারপর স্টিকটিকে ভেতরে ঢুকিয়ে আবার টেনে বের করলে এতে তেল লেগে থাকতে দেখবেন।

এবার লক্ষ্য করুন ডিপস্টিকের মার্কারের কোন অংশ পর্যন্ত তেল লেগে আছে। যদি তেল ডিপস্টিকের দুই লেভেল ইন্ডিকেটরের মধ্যে থাকে, তবে আপনার তেলের লেভেল ঠিকঠাক আছে। কিন্তু যদি সর্বনিম্ন মার্কিং এর নিচে থাকে তবে টপ আপ করতে হবে।

ইঞ্জিনের তেল টপ আপ রাখুন

এবার চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক কিভাবে ইঞ্জিনের তেল টপ আপ করবেন। 

প্রথমে, ডিপস্টিকটি যেখান থেকে নিয়ে এসেছেন সেখানে সযত্নে সুরক্ষিতভাবে রাখুন। এরপর তেলের ক্যাপ খুলুন। সাধারণত তেলের ক্যাপ হলুদ রঙ এর হয় এবং ডিপস্টিকের কাছেই থাকে। আপনার গাড়ির জন্য সঠিক তেল বেছে নিন, তারপরে কিছুটা ঢেলে দিন। যদি আপনি মনে করেন তেল বাইরে বা আশেপাশে ছিটকে পড়তে পারে তাহলে অবশ্যই সবসময় একটি ফানেল ব্যবহার করুন। 

আপনার ইঞ্জিনে ড্রেন করার জন্য তেল ঢালার পর একটু সময় দিন। আপনি যদি খুব দ্রুত ডিপস্টিক চেক করেন তবে তা এখনও একই স্তর দেখাবে। কিছুক্ষণ পর, তেলের স্তর পরীক্ষা করতে আগের মতো ডিপস্টিক ব্যবহার করুন।

তেল ঢালার সময় তাড়াহুড়ো করবেন না। একটু একটু করে কিছুক্ষণ পরপর সময় নিয়ে ঢালুন। অন্যথায় ওভার ফিলিং বা লিকিং এর মতো সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তাই ট্যাংক পরিপূর্ণ না করাই ভালো।

ডিপস্টিক টেনে বের করার পর যে নিষ্কাশিত তেল দেখতে পাবেন, তার রঙ ও প্রকৃতি আপনার গাড়ির ইঞ্জিনের স্বাস্থ্য সম্পর্কে অনেক কিছু বলে দিবে। যদি আপনি তেলের কালো রঙ দেখতে পান, বা অস্বাভাবিক দেখতে পান তাহলে বুঝে নিতে হবে যে ইঞ্জিনে কিছু ত্রুটি রয়েছে। নিষ্কাশিত তেলে যদি মেটাল চাঙ্কস দেখা যায় তাহলে এটি ইঞ্জিন প্রায় ভাঙ্গনের মুখে এমন ইঙ্গিত দেয়। 

এয়ার ফিল্টার পরিবর্তন করুন

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, প্রত্যেকবার তেল পরিবর্তন করার পর এয়ার ফিল্টারও পরিবর্তন করা উচিত। ইঞ্জিন দক্ষতার সাথে কাজ করার জন্য, জ্বালানি কেবল জ্বললেই হবে না, এর জন্য বায়ু এবং পেট্রোলের নির্দিষ্ট অনুপাতের সঠিক মিশ্রণও জরুরি। 

অভ্যন্তরীণ জ্বলনের জন্য অক্সিজেন প্রয়োজন। আর এই অক্সিজেন হতে হবে একদম নিরাপদ। বাতাসের যে সকল ধুলা বালি আমরা খালি চোখে দেখতে পাই, সেসব তো আছেই। এমনকি, যে সকল ধুলা বালি আমরা দেখতে পাই না সেগুলোও আপনার গাড়ির ইঞ্জিনের জন্য হতে পারে মারাত্মক ক্ষতিকর।

আর এই সব ক্ষতিকর ধুলো বালি থেকে গাড়ির ইঞ্জিনকে রক্ষা করতে ও বিশুদ্ধ বাতাস ইঞ্জিনে সাপ্লাই দিতে  দরকার এয়ার ফিল্টার। তাই এয়ার ফিল্টার পরিচর্যা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বছরে কমপক্ষে একবার এয়ার ফিল্টার পরিবর্তন আপনার গাড়ির ইঞ্জিনের আয়ু বাড়িয়ে দিতে পারে ব্যাপকভাবে।

গাড়ির ব্রেকের পরিচর্যা

গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো গাড়ির ব্রেকের পরিচর্যা। ব্রেকের মধ্যে প্রচুর ময়লা জমে যায়। এসব ময়লা যদি দীর্ঘদিন ধরে পরিষ্কার না করা হয় তাহলে ব্রেক ঠিকমতো কাজ করবে না। এসব ময়লা ও ধুলাবালি চাকায়ও লেগে থাকে। তাই নিয়মিত ভেজা স্পঞ্জ এবং পরিষ্কার ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।

শেষকথা

পরিচর্যা কিছুটা বেশি দরকার হলেও সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি কেনা আপনার জন্য বেশ কিছু দিক থেকেই লাভজনক হতে পারে। সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি কেনার উপকারিতা জানতে চাইলে পড়ুন “সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি কিনে কিভাবে লাভবান হবেন” আর্টিকেলটি।

পুরানো গাড়ি কিনতে চাইলে আপনার সবচেয়ে বিশ্বস্ত পার্টনার হতে পারে bhalogari.com। এখানে রয়েছে নতুন, পুরাতন এবং রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বিশাল সমাহার। আমাদের উন্নত সার্চটুল আপনাকে মুহূর্তেই আপনার পছন্দের মডেলের গাড়িটি খুঁজে দিতে পারবে। তাছাড়া আমরা ২০০+ চেকপয়েন্টের মাধ্যমে গাড়ি পরীক্ষা করি। তাই আপনার জন্য উপযুক্ত গাড়িটি কিনে নিতে এক্ষুণি ঘুরে আসুন bhalogari.com-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top