হোন্ডা ইনসাইট বনাম টয়োটা আভালন হাইব্রিড

Honda Insight vs Toyota Avalon

বাংলাদেশে হাইব্রিড গাড়ি চালু হওয়ার পর থেকেই মানুষ হাইব্রিড গাড়ি কেনার দিকে ঝুঁকেছে বিরাটভাবে। আর হাইব্রিডগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতাও বেড়েই চলেছে। প্রতিটি ব্র্যান্ড তাদের হাইব্রিড গাড়ির মডেলে অনন্য সব বৈশিষ্ট্যের ছাপ রেখে অন্যান্য ব্র্যান্ডকে ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় মগ্ন। এর মধ্যে হোন্ডা ইনসাইটটয়োটা আভালন হাইব্রিড অন্যতম। দুটো গাড়িই বাংলাদেশের রাস্তায় অতি পরিচিত।

হোন্ডা ইনসাইট ও টয়োটা আভালন হাইব্রিড উভয় গাড়ি আপনাকে আকর্ষণ করবে তুলনামূলক কম বাজারমূল্যের কারণে। আর নতুন গাড়ি না কিনে যদি আপনি পুরানো গাড়ি কিনেন, তাহলে সাধ্যের মধ্যেই পেয়ে যাবেন গাড়ি দুটি। হোন্ডা ইনসাইটের উৎপাদন শুরু হয়েছিলো ১৯৯৯ সালে। অন্যদিকে, আভালন হাইব্রিড টয়োটা-এর আন্তর্জাতিকভাবে বহুল বিক্রিত একটি গাড়ি। ২০১২ সাল থেকেই টয়োটা আভালন হাইব্রিড জনসাধারণের প্রিয় গাড়িতে পরিণত হয়। পারফরম্যান্স এবং আরামের কথা চিন্তা করলে এদের কোনোটিই আপনাকে হতাশ করবে না। 

কিন্তু যদি প্রশ্ন করা হয় কোন গাড়িটি সেরা, হোন্ডা ইনসাইট নাকি টয়োটা আভালন হাইব্রিড?

উত্তর দিতে গিয়ে চিন্তায় পড়ে যাওয়া খুব অস্বাভাবিক কিছু না। তবে আপনার পছন্দ আর চাহিদার উপর ভিত্তি করে আপনার জন্য উপযোগী কোন গাড়িটি, তা জানতে চাইলে আপনি ঠিক জায়গায়ই এসেছেন। আমাদের আজকের আয়োজন হোন্ডা ইনসাইট বনাম টয়োটা আভালন হাইব্রিড-এর তুলনামূলক বৈশিষ্ট্য নিয়ে।

এক্সটেরিয়র

অনন্য ও শক্তিশালী কাঠামোগত ডিজাইনের পাশাপাশি, হোন্ডা ইনসাইট তার স্বতঃস্ফূর্ত নান্দনিকতা, হ্যান্ডলিং এবং স্পোর্টি অ্যাস্থেটিকসের জন্য গাড়িপ্রেমীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। এই স্বপ্রতিভ মডেলের ৪ দরজার সেডানটি ছয়টি ভিন্ন ভিন্ন রঙে পাওয়া যায়। গাড়িটির রয়েছে ১৬ X ৭.০ ইঞ্চির অ্যালয় হুইল। তবে এই গাড়িতে রান-ফ্ল্যাট টায়ারের সুবিধা নেই। গাড়িটি লম্বায় ১৮৩.৬ ইঞ্চি, চওড়ায় ৭১.৬ ইঞ্চি এবং উচ্চতায় ৫৫.৬ ইঞ্চি।

অন্যদিকে, টয়োটা আভালন হাইব্রিড একইসাথে বোল্ড এবং সাধারণ উভয় রকম ডিজাইনেই সহজলভ্য। এই গাড়িটি কিনতে গেলে আটটি রঙ থেকে আপনাকে বেছে নিতে হবে পছন্দের রঙটি। গাড়িটিতে রয়েছে ১৬ X ৬.৫ ইঞ্চির পেইন্টেড অ্যালয় হুইল। তবে ইনসাইটের মতোই এতে রান-ফ্ল্যাট টায়ারের সুবিধা নেই। গাড়িটি লম্বায় ১৯৫.৯ ইঞ্চি ও চওড়ায় ৭২.৮ ইঞ্চি। ৫৬.৫ ইঞ্চি উচ্চতার সাথে আভালন হাইব্রিড মডেলটিতে রয়েছে যথেষ্ট হেডস্পেস।

ইন্টেরিয়র

একটি হাইব্রিড সেডান হিসেবে ৫ আসনের এই হোন্ডা ইনসাইট মডেলটি যথেষ্ট প্রশস্ত। এতে রয়েছে ১০০.৮ ঘনফুট প্যাসেঞ্জার ভলিউম, সেইসাথে আছে ১৫.১ ঘনফুটের কার্গো স্পেস। যথেষ্ট হেডস্পেস থাকায় আপনি যদি অনেক লম্বাও হন, তবুও আপনার চিন্তার কিছু নেই। বেশ সহজে আর আরামদায়কভাবে বসেই আপনি গাড়ি চালাতে পারবেন। ইনসাইটের চমৎকার ককপিটে ৩৯.৩ ইঞ্চির হেডরুম ও ৪২.৩ ইঞ্চির লেগরুম রয়েছে।

অন্যদিকে, ৫ আসনের টয়োটা আভালন হাইব্রিড মডেলটিতে ১০২.১ ঘনফুট প্যাসেঞ্জার ভলিউমের সাথে ১৬.১ ঘনফুটের কার্গো স্পেস রয়েছে। আভালন হাইব্রিডের প্রশস্ত ককপিটে ৩৭.৪ ইঞ্চির হেডরুম এবং ৪২.১ ইঞ্চির লেগরুম রয়েছে। 

নির্ভরযোগ্যতা

নিশ্চয়তা এবং নির্ভরযোগ্যতার দিক থেকে হোন্ডা ইনসাইট ও টয়োটা আভালন হাইব্রিড উভয়ই ৩ বছরের বা ৩৬ হাজার মাইলের বেসিক ওয়ারেন্টি প্রদান করে। তাছাড়া ড্রাইভট্রেইন ওয়ারেন্টির ক্ষেত্রে গাড়ি দুটি দেয় ৫ বছর কিংবা ৬০ হাজার মাইলের ওয়ারেন্টি।

ফুয়েল ইকোনমি

হোন্ডার তথ্যমতে, ঢাকার মতো শহুরে রাস্তায় হোন্ডা ইনসাইট ৫৫ মাইল/গ্যালন ফুয়েল ইকোনমি প্রদান করে থাকে। অন্যদিকে, টয়োটা জানায় যে আভালন হাইব্রিড শহুরে রাস্তায় ৪৩ মাইল/গ্যালন ফুয়েল ইকোনমি প্রদান করে। হাইওয়েতে হোন্ডা ইনসাইটের ফুয়েল ইকোনমি দাঁড়ায় ৪৯ মাইল/গ্যালন-এ। আর টয়োটা আভালন হাইব্রিড এর ফুয়েল ইকোনমি পাওয়া যায় ৪৪ মাইল/গ্যালন।

ইনসাইটের জ্বালানি ধারণ ক্ষমতা ১০.৬ গ্যালন। আর ঢাকার মতো শহুরে রাস্তায় এই গাড়ির রেঞ্জ ৫৮৩ মাইল। অন্যদিকে, আভালন হাইব্রিডের জ্বালানি ধারণ ক্ষমতা ১৩.২ গ্যালন এবং এর রেঞ্জ ৫৬৮ মাইল। ইনসাইট এবং আভালন হাইব্রিডের হাইওয়ে রেঞ্জ যথাক্রমে ৫১৯ মাইল ও ৫৮১ মাইল।

পারফরম্যান্স

ইনসাইট-এর রয়েছে একটি ১.৫ লিটারের ৪ সিলিন্ডারবিশিষ্ট গ্যাস/ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিন, যা সর্বোচ্চ ১৫১ হর্সপাওয়ার @ ৬,০০০ আরপিএম শক্তি উৎপন্ন করতে পারে। গাড়িটি ০ থেকে ১০০ কিলোমিটার/ঘন্টা গতিতে পৌঁছাতে সময় নেয় ৭.৭ সেকেন্ড। অনেক ধীর মনে হচ্ছে? তবে একবার গতি অর্জন করার পর গাড়িটি আপনাকে ১১৪ মাইল/ঘন্টার সর্বোচ্চ গতি এনে দিতে পারে।

অন্যদিকে, টয়োটা আভালন হাইব্রিড-এর রয়েছে একটি ২.৫ লিটারের ৪ সিলিন্ডারবিশিষ্ট গ্যাস/ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিন, যা সর্বোচ্চ ২১৫ হর্সপাওয়ার @ ৫,৭০০ আরপিএম পর্যন্ত শক্তি উৎপন্ন করতে পারে। গাড়িটি ০ থেকে ১০০ কিলোমিটার/ঘন্টা গতিতে পৌঁছাতে সময় নেয় ৭.৮ সেকেন্ড। গাড়িটির সর্বোচ্চ গতি ১১৬ মাইল/ঘন্টা।

প্রযুক্তি

হোন্ডা ইনসাইট মডেলটিতে রয়েছে একটি আট স্পীকারের অডিও সিস্টেম। সেই সাথে আছে ৭.০ ইঞ্চির ইনফোটেইনমেন্ট, যা গাড়ির যাত্রীদের যাত্রাকে করে তুলবে আনন্দদায়ক। এই ইউজার-ফ্রেন্ডলি সিস্টেমটি আপনার অ্যাপল বা অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের ব্লুটুথ বা ইন্টিগ্রেশনের মাধ্যমে সংযুক্ত করা যায়, যার সাহায্যে আপনি অডিও স্ট্রিমিংয়ের পাশাপাশি কলিং সার্ভিসগুলোও অ্যাক্সেস করতে পারবেন। 

প্রযুক্তিগত দিক থেকে টয়োটা আভালন হাইব্রিডর ইন্টেরিয়র বেশ সাজানো। এর বেস মডেলে রয়েছে ৮.০ ইঞ্চির একটি ইনফোটেইনমেন্ট স্ক্রিন, সেই সাথে বারো স্পীকারের বোস প্রিমিয়াম অডিও সিস্টেম। তাছাড়া ম্যাক্সিমার ইন্টেরিয়রে রয়েছে ব্লুটুথ, দুইটি ইউএসবি পোর্ট, এবং সাথে এন্ড্রোয়েড অটো এবং অ্যাপল কারপ্লে।

নিরাপত্তা

ইনসাইট এবং আভালন হাইব্রিড উভয়েরই মানসম্মত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। এই দুটো মডেলই অসংখ্য ড্রাইভার-অ্যাসিস্ট এবং নিরাপত্তা প্রযুক্তির সুবিধা প্রদান করে। যার মধ্যে রয়েছে কলিশন-অ্যাভয়েডিং অ্যাসিস্ট, ব্রেকিং সিস্টেম, অ্যাডাপ্টিভ ক্রুজ কন্ট্রোল এবং লেন ডিপার্চার ওয়ার্নিং।

শেষকথা

হোন্ডা ইনসাইট এবং টয়োটা আভালন হাইব্রিড-এর এই তুলনামূলক বৈশিষ্ট্যগুলো পড়ার পর কোন গাড়িটিকে আপনার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত বলে মনে হয়? তবে আপনি যে মডেলই পছন্দ করুন না কেন, bhalogari.com থেকে সহজেই পেয়ে যাবেন গাড়িটি। আর আপনি যদি নতুন গাড়ি না কিনে সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি কিনতে চান, তাহলে ভালোগাড়িই আপনার সেরা সমাধান। ব্যবহৃত গাড়ির কন্ডিশন নিশ্চিত করার জন্য ভালোগাড়ি ২০০-টিরও বেশি পার্টস ও চেকপয়েন্ট পরীক্ষা করে, যেনো আপনাকে কোনো ঝামেলাই পোহাতে না হয়। তাই আপনার সবচেয়ে বিশ্বস্ত অটোমোটিভ মার্কেটপ্লেস থেকে কিনে নিন আপনার পছন্দের গাড়িটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top